ওরা মানুষ ; আমরা গরু ছাগল!
September 16, 2024 | 16 ভাদ্র 2024
মীর আব্দুল আলীম
ওরা মানুষ, আমরা গরু-ছাগল!
- মীর আব্দুল আলীম
সীমান্তবর্তী এলাকায় বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে মাটি। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। করার যেন কিছুই নেই। আমরা কেবলই ভারতের বলির পাঠা। প্রতিবাদ যে হচ্ছে না, তা নয়; তবে মিনমিনে প্রতিবাদ। জোরালো কণ্ঠে প্রতিবাদ করলেই যেন রক্ষ নেই। গলা চেপে ধরা হবে, নয়তো গদি নিয়ে কাড়াকাড়ি। এ ভয় যেন সব সরকারকেই পেয়ে বসে। তাই চুপ, একদম চুপ।
স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে না। ক্ষমতার বাইরে থাকলে বিএনপি এনিয়ে হুঙ্কার দেয়। একই অবস্থা আওয়ামী লীগেও। লাশের পর লাশ পড়লেও ২/৪ কথা ছাড়া তেমন কিছুই হচ্ছে না। বরাবরের মতো বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করছে। কিন্তু ভারতের কোনো নাগরিক সীমান্তে বাঙালির হাতে নিহত হলে, সুর পাল্টে যায়। গত ২০ জানুয়ারি, ভারতীয় নাগরিককে হত্যার দায়ে বাংলাদেশের বিডিআর সদস্যকে তুলে নিয়ে গেছে বিএসএফ। ওরা পারে, তাই করে। রাজা-প্রজার ব্যাপার আর কী! গরিব আর দুর্বল রাষ্ট্রের নাগরিক হলে যা হয়, আমাদেরও তাই হয়। ব্যাপারটা এমন, আমরা মরলে গরু-ছাগল আর ভারতীয়রা মরলে 'সুনাগরিক'।
সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হলে কয়েক দিন হৈচৈ আর আইনি মারপ্যাচ ছাড়া আর কিছুই হয় না। এ বিষয়ে বহু দেনদরবার ও বৈঠক হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যন্ত কেউই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। তাদের প্রতিশ্রুতির পুরোটাই প্রহসন! আমরা হতবাক হয়ে দেখছি, পাথর ছুড়ে আহত করা হচ্ছে এবং নদীতে ডুবিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে।
অতিসম্প্রতি মেহেরপুর ও দিনাজপুরে গুলি করে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। কুড়িগ্রামে বোমা নিক্ষেপ করে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়া সীমান্তে দুই বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেছে বিএসএফ। এতে একজন নিহত ও একজন গুরুতর আহত হন। এর আগে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যার ঘটনা শোনা যায়নি। বিএসএফ প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ করছে। বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ক্ষেত্রে তারা বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।
ভারত বারবার বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দাবি জানালেও এ দেশের নাগরিকদের সাথে আচরণ করছে চরম শত্রুতামূলকভাবে। এভাবে সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের নাগরিক হত্যা কোনো সুসভ্য দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী করতে পারে না। আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড মারাত্মক অপরাধ।
বিএসএফ একের পর এক সীমান্ত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই থামছে না। তবুও ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে গণমাধ্যমগুলোতেও প্রতিবাদ উঠছে, কিন্তু কার্যকর কোনো সমাধান নেই। এমনকি ভারতের অনেক মানবাধিকার সংগঠনও বিএসএফের এই হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে।
এটি ভাববার বিষয়, কেন এই সীমান্তে বারবার হত্যা। এদিকে ভারতও দেখছে, সীমান্তে অনবরত হত্যাকাণ্ড চলতে থাকলে দুই দেশের সুসম্পর্ক গভীর অবিশ্বাস আর সন্দেহে ভরে উঠবে, যা কোনো পক্ষের জন্যই কাম্য নয়।
আমরা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের কাছে অনুরোধ করতে পারি, এভাবে নিরীহ মানুষকে হত্যা বন্ধ করুন। আমরা আর সীমান্তে কোনো মানুষকে খুন হতে দেখতে চাই না। ভারত আমাদের পাশে থাকুক বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে।
লেখক: মীর আব্দুল আলীম, সাংবাদিক, সমাজ গবেষক, মহাসচিব- কলামিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ।